03 Dec 2024, 05:55 pm

পূর্ববর্তী আম্বিয়ায়ে কেরামের প্রতি ওহী নাযিল প্রসঙ্গে হাদীসে কুদসীসমূহ (বাংলা অর্থ)

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

১. নিশ্চয়ই  নবীদের  মধ্যে জনৈক নবীকে তাঁর উম্মতের আধিক্যতা গর্বিত করে তুলেছিল। তিনি বললেন, কে তাদের মোকাবিলা করতে পারবে?” তখন আল্লাহ্ তার প্রতি ওহী নাযিল করলেন, “তুমি তোমার উম্মতের জন্য তিনটি বিষয়ের মধ্যে একটি বেছে নেও। হয়ত আমি তাদের উপর মৃত্যুকে, অথবা শত্রæকে অথবা ক্ষুধাকে প্রভাবশালী করে দেব।” অতঃপর তিনি তাদের সামনে ঐশীবাণী উপস্থাপন করলেন। তারা বলল,“ আপনি আল্লাহ্র নবী। আমরা এসব সমস্যা আপনার উপর সোপর্দ করছি। আপনার বিবেচনা অনুযায়ী আপনি আমাদের জন্য এর যেটা খুশি এখতিয়ার করে নেন।” অতঃপর তিনি (এই নবী) নামাযে দাঁড়ালেন। আর যখন তারা ভীতু হত, তখন তারা দ্রæত গিয়ে নামাযে শামিল হত। সুতরাং তিনি নামায আদায় করলেন এবং বললেন, “ক্ষুধা এমন একটি বিষয় যে, এটা সহ্য করার ক্ষমতা আমাদের নেই, শত্রæর চাপ সহ্য করার ক্ষমতাও আমাদের নেই: বরং মৃত্যুকে বরণ করে নিচ্ছি। অতঃপর আল্লাহ্ তাদের উপর মৃত্যুকে প্রভাবশালী করে দিলেন। ফলে তিন দিনে তাদের সত্তর হাজার লোক মৃত্যুবরণ করল। সুতরাং অদ্যকার দিনে আমি বলি, “হে আল্লাহ্! তোমারই সাহায্য কামনা করি, আর তোমারই সাহায্যের বলে আমি আক্রমণ করি । তোমার সাহায্য নিয়েই আমি যুদ্ধ করি। আল্লাহ্ ব্যতীত কারো কোন শক্তি নেই।” ইমাম আহমদ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত সুহাইব (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

২. হযরত ইয়াহইয়া ইবনে যাাকারিয়া (আঃ) প্রভুর নিকট আরজ করলেন, “হে আমার রব! আমাকে সে সম্প্রদাভুক্ত কর যাদের নিন্দায় মানুষ অত্মনিয়োগ করে না।” অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা তার নিকট ওহী প্রেরণ করলেন, “হে ইয়াহইয়া। এটা এরূপ একটি বিষয় যা আমি নিজের জন্যেও বিশেষভাবে নির্ধারণ করিনি: আমি তা তোমার জন্য কিরূপে করব? আমার সম্বন্ধে ঐশী গ্রন্থে সত্য পাঠ থাকা সত্বেও তুমি দেখতে পাবে, ইয়াহুদীরা বলল, ইয়াহইয়া  আল্লাহ্র পুত্র, আর নাসারাগণ বলল, মসীহ আল্লাহ্র পুত্র। কোন কোন সম্প্রদায় এটাও বলল যে, আল্লাহ্র হাত বাঁধা আছে, আর অবিশ্বাসীরা এটা ওটা কত কিছু না বলেছে!” হযরত ইয়াহইয়া বললেন, হে প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন। ভবিষ্যতে আমি আর এরূপ অনুরোধ করব না।” দায়লামী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

৩. মহান আল্লাহ্ হযরত আদম (আঃ) এর প্রতি ওহী নাযিল করে বললেন, “তোমার উপর কোন নতূন বিপদ ঘটার পূর্বে তুমি এ ঘরে হজ্জ সমাধা করে লও।” তিনি বললেন, “আমার উপর কি বিপদ ঘটবে হে আমার রব!” তিনি বললেন, “যা তুমি জান না অর্থাৎ মৃত্যু।” হযরত আদম (আঃ) বললেন, “মৃত্যু কি জিনিস?” আল্লাহ্ বললেন, “অচিরেই তুমি এর স্বাদ গ্রহণ করবে।” হযরত আনাস (রাঃ) এর সূত্রে দায়লামী আলোচ্য হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন।

৪. মহান আল্লাহ্ হযরত মূসা (আঃ) এর নিকট ওহী প্রেরণ করেন, নিশ্চয়ই তোমার সম্প্রদায় তোমাদের মসজিদসমূহ নির্মাণ করেছে। অথচ তাদের অন্তরসমূহ কলুষিত করে নিয়েছে। আার তারা এমনভাবে মোটাসোটা হয়েছে, যেমন ভাবে শুকরগুলো হত্যা করার সময় হয়ে থাকে। আর আমি নিশ্চয়ই তাদের প্রতি লক্ষ্য করিছি, তারপর তাদের প্রতি অভিশাপ দিয়েছি। অতএব, আমি তাদের ইবাদত কবূল করব না এবং তাদেরকে তাদের কাম্য বস্তু দান করব না।” ইবনে মানদা ও দায়লামী আলোচ্য হাদীসখানা ওহী লেখক হানযালা (রাঃ) এর চাচাত ভাইয়ের সূত্রে রেওয়ায়েত করেছেন।

৫। আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর প্রতি ওহী প্রেরণ করলেন, “হে বন্ধু! তুমি তোমার আচার-ব্যবহার সুন্দর কর, যদি তা কাফিরদের সঙ্গেও হয়। তাহলে তুমি নেককার বান্দাদের শামিল হবে। কারণ আমার উক্তি পূর্বেই লেখা হয়েছে, যে ব্যক্তির আচার-ব্যবহার সুন্দর হবে তাকে আমার আরশের নীচে ছায়াদান করব, আমার পবিত্র জান্নাতের প্রকোষ্ঠে রাখব এবং আমার সন্নিধ্যে আনয়ন করব।” হাকীম ও তিরমিযী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

৬. মহান আল্লাহ্ আমার ভাই উযাইর (আঃ) এর নিকট ওহী প্রেরণ করলেন, “হে উযাইর! তোমার উপর যদি কোন বিপদ আসে, তবে আমার বিরুদ্ধে আমার সৃষ্টজীবের নিকট কোন অভিযোগ করো না। তোমার দিক থেকে আমি বহু কষ্টই পেয়েছি কিন্তু তোমার বিরুদ্ধে আমি আমার ফেরেশতাদের নিকট কোন নালিশ করিনি। হে উযাইর! আমার আদেশ যে অনুপাতে অমান্য কর, সে অনুপাতে আমার শাস্তি সহ্য করার ক্ষমতা তোমার আছে? আমার নিকট থেকে তোমার প্রয়োজন সমূহ যে পরিমাণ প্রার্থনা কর, সে পরিমাণ আমার আদেশ পালন করার ক্ষমতা তোমার আছে? আর আমার কৌশল থেকে নির্ভয় হবে না, যে পর্যন্ত তুমি আমার বেহেশতে প্রবেশ করতে না পার।” অতঃপর উযাইর কেঁপে উঠলেন এবং কাঁদতে লাগলেন। তারপর আল্লাহ্ তার উপরে ওহী প্রেরণ করলেন, “হে উযাইব! কান্নাকাটি করবেনা, তুমি যদি অজ্ঞতাবশত আমার অবাধ্য হয়ে থাক, তবে নিশ্চয়ই আমার সহিষ্ণতা ও  ধৈর্য দ্বারা তোমাকে ক্ষমা করব। কারণ  আমি  দয়াশীল। আমি  আমার  বান্দাদের শাস্তি ত্বরান্বিত করব না, আর আমি সকল দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম দয়ালু ও অনুগ্রহকারী।” দায়লামী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

৭. আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) এর প্রতি ওহী নাযিল করলেন, “হে ঈসা! বনী ইসরাঈলের নেতাগণকে বলে দাও, যে ব্যক্তি আমার সন্তুষ্টির জন্য রোযা রাখবে, আমি তার দেহ সুস্থ করে দেব এবং তার প্রতিদান বাড়িযে দেব।” আবুশ শায়খ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবু দারদা (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

৮. হযরত দাঊদ (আঃ) এর প্রতি আল্লাহ্ তা‘আলা ওহী নাযিল করলেন, “কিয়ামতের দিন কোন বান্দা একটি মাত্র নেকী নিয়ে উপস্থিত হবে। আমি তাকে এ পরিবর্তে জান্নাতে প্রবেশ করার নির্দেশ দেব।” দাঊদ (আ) আরজ করলেন “হে প্রতিপালক! কে সে বান্দা? তিনি বললেন, যে মু‘মিন বান্দা তার মুমিন ভাইয়ের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য দৌড়িয়ে যায়। তবে অভিপ্রায় এ থাকে যে, মানুষের প্রয়োজন পূর্ন হউক, সেটি তার হাতে হউক বা অন্য কারও হাতে।” খাতীব আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আলী (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

৯. হযরত মূসা ইবনে ইমরান (আঃ) এর প্রতি আল্লাহ্ তা‘আলা ওহী নাযিল করলেন, “যদি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ সাক্ষ্য দেয়ার মত কোন লোক না থাকত তবে নিশ্চয়ই আমি জাহান্নামকে দুনিয়ার অধিবাসীদের ওপর চাপিয়ে দিতাম। হে মূসা! যদি আমার ইবাদত করার মতো লোক না থাকত, তেেব যে আমার অবাধ্য হয়, তাকে চোখের পলক পরিমাণ সুযোগ দিতাম না। হে মূসা! যে ব্যক্তি আমার ওপর ঈমান আনে, সে আমার নিকট সৃষ্টির মধ্যে সেরা মর্যাদার অধিকারী। হে মূসা? মাতা-পিতার অবাধ্য জনের শব্দ এরূপ যে, পৃথিবীর সমুদয় বালুকণা তার প্রতিবাদ করে।” হযরত মূসা (আঃ) প্রশ্ন করলেন, “মাতাপিতার অবাধ্য কে?” তিনি বললেন, “যে ব্যক্তি মাতা-পিতার আদেশের জবাবে বলে, “আমি এ কাজ করব না” সে-ই অবাধ্য।” আবূ নূয়াইম হযরত আনাস (রাঃ) এর সূত্রে আলোচ্য হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 6199
  • Total Visits: 1363594
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1669

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ১লা জমাদিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, বিকাল ৫:৫৫

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018